শিরোনাম
নিজস্ব প্রতিবেদক | ১১:২৪ পিএম, ২০২০-১২-০৩
কৃষক পরিবারে জন্ম আব্দুল মান্নানের। গ্রামের ধুলো গায়ে মাখিয়েই তার বেড়ে ওঠা। শৈশব কেটেছে তার গ্রামের অন্য কিশোরদের মতই, দস্যিপনায়। ছোট বেলায় বাবা ভর্তি করিয়ে দেয় তাকে মাদ্রাসায়। দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া মান্নান এইচএসসিতে ভর্তি হন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া সরকারি কলেজে। কৃতিত্বের সাথে শিক্ষাজীবনের এই স্তর ডিঙিয়ে সুযোগ পান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনায় পা রাখার। ইনস্টিটিউট অব এডুকেশন এন্ড রিসার্চে (আইইআর) ভর্তি হন তিনি।
মান্নানরাই এই ইনস্টিটিউটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী। ছোট বেলা থেকে শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরে মেধার স্বাক্ষর রাখা মান্নান চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও করেছেন বাজিমাত। ইনস্টিটিউটের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মধ্যে মাস্টার্সে ৩.৭৫ ও অনার্সে ৩.৬৬ পেয়ে অর্জন করে মাথায় তুলেছে সেরা হওয়ার মুকুট। সফলতার স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) শিক্ষাবৃত্তি পেয়েও হয়েছেন গৌরবান্বিত। চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ছোটহাতিয়া গ্রামে জন্ম নেওয়া আব্দুল মান্নান উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত অবস্থায়ও অর্জন করেন চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড বৃত্তি।
২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা মিলিয়ে মোট ১২০ শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠাকলীন নাম ছিল শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইইন্সটিটিউট।পরবর্তীতে নাম পাল্টিয়ে হয় শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট। নতুন হিসেবে এই বিভাগটি নিয়ে শুরু থেকেই নানারকম জটিলতা লেগেই ছিল। নানা ঘাত প্রতিঘাতের পর প্রকাশিত হওয়া ১ম ব্যাচের মাস্টার্সের ফলাফলে প্রথম হয় আবদুল মান্নান। এর আগে অনার্সের ফলাফলেও তিনি অর্জন করে প্রথম স্থান।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এই কৃতি শিক্ষার্থী মুখোমুখি হন সাতকানিয়া প্রতিদিনের। তুলে ধরেন শিক্ষাজীবনের তার সফল হওয়ার নেপথ্যের গল্প।
আব্দুল মান্নান বলেন, 'নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান আমি। পরিবারে সমর্থনে পড়াশোনা চালিয়ে গেলেও খরচ যোগাতে উচ্চমাধ্যমিক থেকেই সংগ্রাম করতে হয়েছে। প্রতিনিয়ত ছুটতে হয়েছে টিউশনের পথে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর প্রতি সপ্তাহে কোচিং করাতে গ্রামে গিয়েছি। পড়াশোনায় কিছুটা ব্যাঘাত ঘটলেও অতিরিক্ত পরিশ্রম করে তা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করতাম। পরিবারের স্বপ্নটাকে সবসময় বড় করে দেখেছি। এখনও আমার পরিবার আমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখি।'
তিনি বলেন, '২০১২ সালে নতুন বিভাগ সম্পর্কে কোন ধারণা ছাড়াই এই বিভাগের ভর্তি হই। প্রথম ব্যাচ, তাই স্বপ্ন ছিল ভালোভাবে পড়াশোনা শেষ করে প্রথম স্থান অধিকারে নেওয়া। সেই লক্ষ ধরেই আগাতে থাকি। প্রথম বর্ষে যখন প্রথম স্থান অর্জন করি তখন আস্থা আরও বেড়ে যায়। কষ্ট করলে যে সফলতা আসবে তা বুঝতে পারি। ধারাবাহিকভাবে ৩.৬৬ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম স্থান অর্জন করি অনার্সে।'
বিভাগে ভাল ফলাফল অর্জন করতে হলে একজন শিক্ষার্থীকে কী কী বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে- এমন প্রশ্নের উত্তরে মান্নান বলেন, 'ক্লাসে যাওয়ার আগের রাতে ক্যারিকুলাম দেখে পড়ে যাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আনার ক্যাম্পাস থেকে ফিরে ক্লাসের করা নোটগুলো আবার খাতায় তুলতে হবে বিস্তারিত ভাবে। এতে দুই দফা আয়ত্ব হয়ে যায় পড়াগুলো। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল গ্রুপ স্ট্যাডি। এর মাধ্যমে সম্পূর্ণ ক্যারিকুলাম বিশ্লেষণ আকারে অধ্যয়নই করা হয়। একজন শিক্ষার্থী এগুলো মেনে চললেই সাফল্য নিশ্চিত।'
তিনি আরও বলেন, 'আমার বাবা-মা, দুই প্রবাসী ভাই ও একমাত্র বোন আমার সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণা। এর বাইরে কিছু বড়ভাই ও সহপাঠী পেয়েছি যারা প্রতিনিয়ত আমায় সাপোর্ট দিয়েছেন। শিক্ষা জীবনে এমন কিছু শিক্ষক পেয়েছি যারা আমাকে সঠিক লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছেন। আমার শিক্ষকদের উৎসাহে আমি এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল কোর্সে ভর্তির আবেদন করেছি। আমার ইচ্ছে আছে বিশ্বের নামকরা কোনো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচডি করার। এতে দেশের উচ্চ শিক্ষার প্রসারে নিয়োজিত করার আমার যে ইচ্ছে তা বাস্তবায়ন করতে পারবো।'
তিনি বলেন, 'প্রথম ব্যাচ হওয়ায় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আমাদের পড়তে হয়েছে নানা বিড়ম্বনায়। প্রফেশনাল কোর্সের শিক্ষক স্বল্পতা ছিল প্রধান সমস্যা। যার ফলে একজন শিক্ষককে চারটি কোর্স পর্যন্ত নিতে হয়েছে। শিক্ষকরা আমাদের জন্য অনেক বেশি কষ্ট করেছেন। অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও তারা সবসময় আমাদের বিষয়ে ছিলেন আন্তরিক। শিক্ষক স্বল্পতার কারণে সেশন জট ছিল। পরীক্ষার ফলাফল পেতে দেরি হয়েছে। বিভাগের হাজারো সমস্যা থাকা সত্ত্বেও শিক্ষকদের আন্তরিকতায় আমরা নিজেদের এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করেছে।'
তিনি বলেন, 'বর্তমানে এই বিভাগে সাতটি ব্যাচ অধ্যয়নরত। আইইআর থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করে বের হয়েও এখনো নিজের বিভাগকে নিয়ে স্বপ্ন দেখি। নিজের শেকড়কে নিজের মধ্যে ধারণ করার চেষ্টা করি। এখনো বিশ্বাস করি বিভাগের সকল সমস্যা কেটে যাবে আমাদের শিক্ষকদের অব্যাহত আন্তরিক পরিশ্রমের কারণে।'
নিজস্ব প্রতিবেদক : দীর্ঘ ২২ বছর পর সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতকানিয়া উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা আমজাদ হত্যা মামলার র...বিস্তারিত
নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতকানিয়ার উপজেলার সোনাকানিয়ায় গভীর রাতে দুই বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। গত রোববার দিবাগত রা...বিস্তারিত
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত ২০১৯ - © 2022 Satkania Pratidin | Developed By Muktodhara Technology Limited